
তাজা খবর: বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। দেশটি শনিবার জানায়, তাদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানি করা যাবে না। বিশেষ করে ভারতীয় আমদানিকারকরা বাংলাদেশি পোশাক কিনতে চাইলে কলকাতা এবং মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা সমুদ্র বন্দর দিয়ে আনতে হবে।
বাণিজ্য বিষয়ক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) জানিয়েছে, ভারতের এ নিষেধাজ্ঞার কারণে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের ওপর প্রভাব পড়বে। যা দুই দেশের মোট বাণিজ্যের ৪২ শতাংশ।
ভারত এর আগে গত মাসের শুরুতে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এরপর বাংলাদেশও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সূতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল। খবর বিবিসির।
ভারতের নতুন বিধিনিষেধে কী আছে
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) শনিবার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তাতে বলা হয়েছে, কোনো স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কোনো ধরনের পোশাক পণ্য ভারতে ঢুকতে পারবে না।
এছাড়া এ আদেশে ফল, ফলের-স্বাদযুক্ত পানীয় ও কার্বোনেটেড ড্রিংকস; বেকারি, চিপস, স্ল্যাকস এবং কনফেকশনারিতে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার; তুলা ও সুতার ঝুট; পিভিসিসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য এবং কাঠের তৈরি আসবাবপত্র আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের চেংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী দিয়ে ভারতের আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও পাথর আমদানি বহাল রেখেছে দেশটি। সেই সঙ্গে ভারতের ওপর দিয়ে ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিও অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে তারা।
তাছাড়া তৈরি পোশাক এখন থেকে কেবল কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নভসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।
এর আগে গত মাসেই বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
ব্যবসায় কেমন প্রভাব পড়বে
বাংলাদেশ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই বেশি। পাশাপাশি ছিল বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিক পণ্য ও আসবাব সামগ্রী।
আবার আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য।
অন্যদিকে গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে, যা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছিল।
এছাড়া সেভেন সিস্টার্স হিসেবে পরিচিত উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতেও বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। এই রাজ্যগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছিলেন।
এখন ভারতের নতুন বিধিনিষেধে এর দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। কারণ তৈরি পোশাক স্থল বন্দরের পরিবর্তে সমুদ্র বন্দর দিয়ে পাঠাতে হলে খরচ ও সময় দুটি বেশি লাগবে।
তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ অবশ্য বলছেন ভারতের এ সিদ্ধান্তে উভয় দেশের জন্যই ক্ষতির কারণ হবে।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠালে আমাদের খরচ ও সময় কম লাগে। সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠালে ব্যয় বাড়বে, আবার সময়ও অনেক বেশি লাগবে। কিন্তু এতে যে শুধু আমাদের ক্ষতি হবে তা নয়, ভারতীয় আমদানিকারকদেরও তো খরচ বাড়বে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে এখন প্রায় ৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ভারতে, যা প্রতিবছরই বাড়ছিল।
সামাদ বলেন, এর বড় অংশই স্থলবন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি হচ্ছিল, যার ফলে দুই পক্ষই লাভবান হচ্ছিল।
ওদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন রোববার ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নতুন বিধিনিষেধের বিষয়টি ভারত এখনো বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
তবে তার দাবি ভারতই বাংলাদেশে বেশি রপ্তানি করে বলে স্থলবন্দর কেন্দ্রিক বিধিনিষেধে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অবশ্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান করা সম্ভব বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তবে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় তারা কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা পরিষ্কার নয়।