শিক্ষা ও সংস্কৃতি

শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রের, এগুলো ব্যবসার পণ্য নয়

আমরা প্রায়ই বড় বড় শব্দকে অবমূল্যায়ন করি

তাজা খবর: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কখনোই প্রাইভেট খাতে ছেড়ে দেওয়ার মতো বিষয় নয়, এগুলো রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হওয়া উচিত। জাতীয় উন্নয়নের পথে এগোতে চাইলে জনগণকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং সুশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে নিমো লার্নিংয়ের আয়োজনে ‘স্বাক্ষরতায় বাংলাদেশের অর্জন এবং আগামীর পরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় বলেন, আমরা প্রায়ই বড় বড় শব্দকে অবমূল্যায়ন করি। যেমন– কাউকে ‘প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা’ ঘোষণা করলেই তার মর্যাদা প্রথম শ্রেণির হয়ে যায় না। বাস্তবে যদি সেই সুবিধা বা মর্যাদা কার্যকর না হয়, তবে তা কেবল কাগজে কলমেই থেকে যায়। শিক্ষা ক্ষেত্রেও অনেক সময় এ ধরনের কাগুজে উন্নয়ন হয়, কিন্তু বাস্তবে আমরা একচুলও এগোতে পারি না। একটি দেশের উন্নতির মূল শর্ত দু’টি– সুস্বাস্থ্য ও সুশিক্ষা। এগুলো কখনোই প্রাইভেট বিষয় হতে পারে না, বরং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে দেখতে হবে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তবেই জাতি হিসেবে আমরা এগোতে পারব, না হলে একই চক্রে ঘুরপাক খেতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ধীরে ধীরে জাতীয় দায়িত্ব থেকে প্রাইভেট খাতে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠী লাভবান হলেও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভাজন তৈরি হয়েছে; একদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অন্যদিকে প্রাইভেট ও ইংলিশ মিডিয়াম। এই বিভাজনই শিক্ষার ঐক্য নষ্ট করছে।

উপদেষ্টা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ২০১৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হলেও তারা তৃতীয় শ্রেণির সুবিধা হারান, আবার দ্বিতীয় শ্রেণির সুবিধাও পুরোপুরি পাননি। এতে তারা আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন।

তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসীরা বিশ্বের শ্রমবাজারে তুলনামূলকভাবে কম আয় করেন। এর প্রধান কারণ তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার ঘাটতি। প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে এগিয়ে যেতে হলে মানসম্মত শিক্ষা অপরিহার্য। চীন, ভারত বা অন্যান্য দেশের অগ্রগতির মূল ভিত্তি হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক শৃঙ্খলা। আমাদেরও একই পথে হাঁটতে হবে।

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার মনে করেন, ১৯৯০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার আইন করা হলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। তার ভাষায়, ‘যদি প্রাথমিক শিক্ষা আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক হয়, তবে এত বিপুলসংখ্যক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কেন গড়ে উঠল? সরকারি স্কুলগুলো কেন মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে পারল না? এর দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম বা ভলান্টারি প্রতিষ্ঠানের অভাবও জাতীয় দুর্বলতা। এ ধরনের উদ্যোগ বাড়লে শিক্ষার পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যম– ব্যক্তিত্ব সোহরাব হাসান, সাবেক শিক্ষিকা ও অভিনেত্রী দিলারা জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কুতুবউদ্দিন, বিএনসিসির সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাহিদুল ইসলাম খান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button