মৎস্য বিভাগের জেলে পুনর্বাসনের প্রকল্পে অনিয়ম
প্রতিবাদের মুখে তাৎক্ষণিক ৩ টি বাছুর ঠিকাদারকে ফেরত

একেএম মাহমুদ রিয়াজ, লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুরে রোগাক্রান্ত ও আকারে ছোট বকনা বাছুর (গরু) বিতরণের অভিযোগ উঠেছে মৎস্য বিভাগের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে জেলেরা। প্রতিবাদের মুখে তাৎক্ষণিক ৩ টি বাছুর ঠিকাদারকে ফেরত দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন প্রকল্প সভাপতি ইউএনও।
জানা গেছে, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগের সহায়তায় ১৬ জন দুঃস্থ মৎস্যজীবীর মধ্যে বকনা বাছুর বিতরণের কথা ছিল চট্টগ্রামের আবদুর রহিম এগ্রো এণ্ড ফিশারিজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিতরণের দিন রোগাক্রান্ত ওই স্থুলা আকৃতি বকনা বাছুরগুলো নিয়ে সুবিধাভোগীরা প্রতিবাদ করেন । এছাড়া ওজন এবং আকার সরকার নির্ধারিত মানের নয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে বকনা বাছুর বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রকল্প সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামশেদ আলম রানা। এসময় বাছুর রোগাক্রান্ত ও আকারে ছোট হওয়ায় প্রতিবাদ জানান জেলেরা। জেলেদের প্রতিবাদের মুখে ৩ টি বাছুর ফেরত দেন ইউএনও।
উপজেলার চর রমনি মোহন ইউনিয়নের আবদুর রহিম বলেন, মৎস্য বিভাগ যে বকনা বাছুরটি দিয়েছিলো। সেটি অসুস্থ ও আকারে খুবই ছোট। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। এতে বাছুরটি ফেরত নিয়ে গেছে মৎস্য বিভাগ। শুধু আমার নয় অন্য দুইজন জেলেরও বাছুর ফেরত নিয়েছে। পরবর্তীতে সুস্থ-সবল বাছুর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
মৎস্যজীবী বাচ্চু মিয়া বলেন, বকনা বাছুরগুলো কম বয়স্ক ও রোগাক্রান্ত। আবার ওজন এবং আকারেও ছোট। বাছুরগুলোর দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেশি হবে না। কিন্তু শুনেছি প্রত্যেক বাছুর প্রতি সরকারি বরাদ্দ ৩০ হাজার টাকা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বকনা বাছুর বিতরণ না করে আমাদের সঙ্গে তামাশা করেছে মৎস্য বিভাগ।
অভিযোগ রয়েছে, পূর্বে রোগাক্রান্ত বাছুর দেওয়ায় একাধিক জেলের বকনা বাছুর মারা যায়। বিষয়টি মৎস্য বিভাগকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আবদুর রহিম এগ্রো এণ্ড ফিশারিজ’ এর প্রতিনিধি মো. জাফর বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বকনা বাছুরগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানে রোগাক্রান্ত কোন বাছুর নেই। তবে কেন ৩ টি বাছুর ফেরত দেওয়া হয়েছে? সে প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সুস্থ-সবল বকনা বাছুর জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র রোগাক্রান্ত ও আকারে ছোট হওয়ায় ৩টি বাছুর ফেরত দিয়েছি। উপকারভোগী নির্বাচন, বাছুর ক্রয় ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। তাছাড়া বাছুর ফেরত দেওয়ার ঘটনা পূর্বে কখনো ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১ মাসের মধ্যে যদি কোন বাছুর মারা যায়। তাহলে ওই উপকারভোগীকে পুনরায় বাছুর দেওয়া হবে। বিষয়টি প্রত্যেককে বলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রোগাক্রান্ত হওয়া পূর্বে বাছুর মারা গিয়েছে। তবে ওই উপকারভোগীকে পুনরায় বাছুর দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আমার জানা নেই।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা বলেন, বকনা বাছুর বিতরণ প্রকল্পের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নয়। শুধু বিতরণকালে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলাম। তবে, জেলেদের দাবিতে ৩ টি বকনা বাছুর ঠিকাদারকে ফেরত দিয়েছে। ঠিকাদারকে মৌখিক সতর্ক করার জন্য মৎস্য বিভাগকে নির্দেশনাও দিয়েছি।