সারা বাংলা

বাঙালি জাতি সর্বদাই শান্তি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: সেনাপ্রধান

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অগ্রদূত হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম

তাজা খবর: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাঙালি জাতি সর্বদাই শান্তিপ্রিয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অদ্যাবধি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অগ্রদূত হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।

‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

সেনাপ্রধান বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের মহান আত্মত্যাগ ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৯ মে বিশ্বব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস’ উদযাপন হয়ে আসছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম প্রধান শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে এ দিবসটি আমাদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৫’ এর এ মহান দিনে আমি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত এবং এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্নকারী সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।

সেনাপ্রধান বলেন, বাঙালি জাতি সর্বদাই শান্তিপ্রিয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অদ্যাবধি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অগ্রদূত হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৮৮ সালে শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরুর পর হতে সুদীর্ঘ তিন যুগের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ লাখ ৬২ হাজার ৩৫ জনের বেশি শান্তিরক্ষী মোট ৪০টি স্থানে ৫৬টি শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে।

বর্তমানে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সর্বমোট ৬০৯২ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত আছেন। যার মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় ৫ হাজার সদস্য বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন রয়েছে।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, অভিযানিক দায়িত্ব পালনে উন্নত পেশাগত গুণাবলি প্রদর্শনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালনে সর্বদাই নিরপেক্ষ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ কারণেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা সকলের কাছে বিশেষভাবে প্রশংসিত ও স্বীকৃত-যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।

অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আজকের এই গৌরবময় অর্জন সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৩১ জন শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে জীবন উৎসর্গ করেছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪১ জন সেনাসদস্য বিভিন্ন অভিযানে আহত হয়েছেন। আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেই সকল বীর শান্তিরক্ষীদের-যারা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি সকল জীবন উৎসর্গকারী সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তাদের অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ বিশ্ব দরবারে সুনামের সুউচ্চ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথমবারের মতো ডিআর কঙ্গোতে তিনটি হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য একটি নতুন মাইলফলক। গত ৪ মার্চ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক-এ চলমান শান্তিরক্ষা মিশনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নির্মিত ‘তোয়াদেরা কমিউনিটি ক্লিনিক’ এর উদ্বোধন করা হয়-যা বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করেছে।

এছাড়াও, সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য পেরুর সশস্ত্র বাহিনীকে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়কারী যান দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরাও এখন আগের তুলনায় অধিকহারে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

সার্বিকভাবে সুপ্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ সেনাসদস্য, উন্নত সরঞ্জাম, বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং উন্নত মূল্যবোধের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিশন এলাকায় জনসাধারণ ও জাতিসংঘের আস্থা অর্জনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বাংলাদেশের সকল শান্তিরক্ষীদের জন্য রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা, দোয়া ও শুভ কামনা। আমি আশা করব, সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা বিশ্ব শান্তি রক্ষায় মানবতার পক্ষে পেশাগত দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। একইসাথে আমি জাতিসংঘের সকল সদস্যের সম্মিলিত অংশগ্রহণে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস সফল হোক এই কামনা করি। আগামী প্রজন্মের কাছে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব উপহার দিতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবার সহায় হোন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button