জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মুখ খুললেন ইসি সচিব
সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোট-সংশ্লিষ্ট সকল সরঞ্জাম কেনাকাটার কাজ শেষ

তাজা খবর: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে আয়োজন করতে কমিশনের প্রস্তুতিমূলক কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেছেন ইসি সচিব মো. আখতার হামিদ। তিনি জানান, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোট-সংশ্লিষ্ট সকল সরঞ্জাম কেনাকাটার কাজ শেষ করে ফেলতে চায় কমিশন। একই সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা, আইনবিধি, দল নিবন্ধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রমও গুছিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
সোমবার (৪ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব আখতার হামিদ এসব কথা বলেন।
তফসিল কবে নাগাদ হতে পারে, জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার ব্যাপারটা একান্তভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর। যখনই ইসি সিদ্ধান্ত নেবে আমরা জানাবো। আমাদের সব প্রস্তুতি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আমাদেরও গোছানোর সময় দিতে হবে। যেগুলো একটু একটু হচ্ছে জানাচ্ছি, যেগুলো চলমান জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে কী আসবে জানাবো।’
অক্টোবরের মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে কিনা-দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইসি সচিব জানান, ইসির কিছু কাজ বাকি রাখতে হবে’ যেটা অক্টোবরের পরে বলা যাবে।
তিনি বলেন, আজ আমি বেশ কিছু টাইমলাইন ধরে কথা বলেছি। টাইমলাইন, কর্মপরিকল্পনা, অ্যাকশনপ্লান যেভাবেই বলেন—কাজের এ ব্যপ্তিটা আসল।
জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে টাইমলাইন দিয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করছি। আমরা আমাদের প্রস্তুতি জানাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন যেসব সিদ্ধান্ত নেন তা তুলে ধরা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ৩০টি দল নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ১৫টি দল সময় বাড়াতে আবেদন করেছে। ৬টির দলের মধ্যে একটি নিবন্ধন পেয়েছে এ বছর তাই অডিট রিপোর্ট জমা দেয়নি। ৫টি দল অডিট রিপোর্ট জমা দেয়নি। এখন কমিশনে পাঠানোর পর দিকনির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ১৪৫টি দল নিবন্ধন আবেদন করেছে। তথ্য ঘাটতি চেয়ে চিঠি দেওয়ার পর ৩ অগাস্টের মধ্যে এরমধ্যে ৮০টি দল চাহিত ডকুমেন্ট দিয়েছে। সময় বাড়াতে আবেদন করে ৬টি দল। ৫৯টি দল কোনো রিপ্লাই করেনি।
সময় বাড়ানো ও তথ্য ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে কমিশনে উপস্থাপন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ৮৯টি দলের আবেদন ফারদার রিভিউ করছি; ঠিক মতো দিয়েছে কিনা, কোনটা মাঠ পর্যায়ে যাবে বা আরও তথ্য ঘাটতি থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বছর ৩টি ভোটার তালিকার কথা উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, বছরের শুরুতে ২ মার্চ একবার হালনাগাদ ভোটার তালিকা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ ১০ অগাস্ট এবং ভোটের এক মাস আগে সম্পূরক আরেকটি তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে এবার তিনটি তালিকা হচ্ছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সবশেষ ভোটের একমাস আগে সম্পূরক তালিকা প্রকাশ হবে; যাতে নতুন ভোটাররা যুক্ত হবেন।’
সীমানা নির্ধারণ
ইতোমধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। ১০ অগাস্টের মধ্যে দাবি-আপত্তি জানানোর সময় রয়েছে। পরবর্তী শুনানি শেষে এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। অগাস্টের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পযবেক্ষক সংস্থা
ইতোমধ্যে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। ১০ অগাস্টের মধ্যে আবেদনগুলো পেলে বিধি অনুযায়ী শেষ করে করা হবে।
আইন-বিধি সংস্কার
ইতোমধ্যে সীমানা আইন সংশোধন অধ্যদেশ, ভোটার তালিকা সংশোধন অধ্যাদেশ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনী নীতিমালা, স্থানীয় পযবেক্ষক নীতিমালা, বিদেশি পযবেক্ষক ও গণমাধ্যম নীতিমালা, পযবেক্ষক সংস্থা নীতিমালা জারি ও আবেদন আহ্বান করা হয়েছে।
ইসি সচিব বলেন, আরও তিনটি আইন-বিধি সংক্রান্ত তিনটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ উইংয়ে ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান সংশোধন ও ইসি সচিবালয় আইন সংশোধন ভেটিং শেষে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।
আচরণবিধিতে এআই অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা রোধেও কারিগরি ও বিধিতে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একটু একটু করে আগাচ্ছেন বলে জানান ইসি সচিব। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের যথাসময়ে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে।
নির্বাচনী সরঞ্জাম ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেনাকাটা শেষ করা হবে উল্লেখ তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আট টা আইটেম দরকার রয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওয়া যাবে। ইসির হাতে থাকা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী ও যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে।
প্রবাসী ভোট
প্রবাসী ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকারের লক্ষ্যে প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। এটি বছরে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সচিব জানান, শিগগির পরিকল্পনা কমিশনের আনুষ্টানিক অনুমোদন পাওয়া যাবে। নিবন্ধনের প্লাটফর্ম তৈরি করার কাজ চলমান রয়েছে।
পরিবেশ দেখতে ইইউ টিম আসছে সেপ্টেম্বরে
ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের অগ্রবর্তী পযবেক্ষক দল নির্বাচনের প্রাক পরিবেশ দেখতে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশে আসছে।
ইসি সচিব বলেন, ইইউ পযবেক্ষণ টিম মিড সেপ্টেম্বরে দেশে আসবে। এরমধ্যে তিনজন বিদেশি ও চার জন স্থানীয় পযবেক্ষক থাকবেন। এটা আজ আমাদের জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এটা জেনেছি।
সচিব জানান, প্রি ইলেকশন এনভায়রনমেন্ট অবজারভেশনের জন্য তারা আসবেন। ইসির নির্বাচনী প্রস্তুতি কী আছে তা দেখার জন্য আসবেন।
আস্থা ফেরাতে কী উদ্যোগ
ইসি সচিব জানান, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও ইসি সচিবালয় সব অগ্রগতি, তথ্য দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে আস্থার ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন একটি মেরুদণ্ডহীন প্রতিষ্ঠান-নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি নেতা নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারীর এমন মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে
স্মিত হেসে ইসি সচিব বলেন, মেরুদণ্ড সোজা না থাকলে দাঁড়িয়ে আছি কীভাবে? রাজনৈতিক বক্তব্য আমরার এরিয়া নয়, আমরা জায়গাটা প্রশাসনিক ব্যাপার। এখন পযন্ত সোজাই দাঁড়িয়ে আছি। দোয়া করেন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি।