অসুস্থ হয়ে পড়ায় বসেই বক্তব্য দিলেন জামায়াত আমির
আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইনশাআল্লাহ

তাজা খবর: জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তবে তিনি পরে বসে বসে বক্তব্য দিয়েছেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বক্তব্য দিতে উঠেন। এ সময় গরমের কারণে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। তখন তিনি মাথার টুপি খুলে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নিচে পড়ে যান।
পরে নেতাকর্মীরা তাকে ধরে মঞ্চেই শুয়ে দেন। তখন মাইক থেকে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জামায়াত আমির অসুস্থ হয়ে পড়ায় ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন তার জন্য কথা বলা ঠিক হবে না। তবে সঙ্গে সঙ্গে জামায়াত আমির বসে থাকা অবস্থাতেই বক্তব্য শুরু করেন।
এ সময় তিনি জানান, যত অসুস্থতাই হোক তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সংগঠনের জন্য কাজ করে যাবেন। হায়াত-মওতের মালিক আল্লাহ। নেতাদের অনেকেই তাকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার অনুরোধ করেন। তবে তিনি জানান, আল্লাহর যা ফায়সালা তাই হবে। এর বাইরে কিছু হবে না।
বক্তব্যে আবেগপ্রবণ কণ্ঠে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমার আফসোস, যারা ২০২৪ সালে শহীদ হয়েছেন, আমি তাদের সঙ্গে শহীদ হতে পারিনি। আপনাদের কাছে দোয়া চাই- আগামী দিনের ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে আল্লাহ যেন আমাকে শহীদের মর্যাদা দেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমি এখানে জামায়াতের আমির হিসেবে নয়, ১৮ কোটি মানুষের একজন প্রতিনিধি হিসেবে এসেছি। শিশুদের বন্ধু, যুবকদের ভাই, প্রবীণদের সহযোদ্ধা হয়ে এসেছি, এই জাতির মুক্তির প্রত্যয়ে।
তরুণ প্রজন্মকে বিশেষভাবে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোমরা শুধু দর্শক হয়ে থাকবে না, এই দেশ গঠনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। এটা শুধু কোনো শ্রেণির যুদ্ধ নয়, এটা চাষি, মজুর, ছাত্র, যুবক—সব শ্রেণির মানুষের যুদ্ধ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, এটি আল্লাহর ইচ্ছা। আবার অসুস্থ হয়ে পড়াটাও আল্লাহর পরীক্ষা। যতদিন হায়াত আছে, ততদিনই আমি লড়াই করে যাবো।
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে ২০২৪ সালে সংঘটিত ‘গণহত্যার’ বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, যে নির্মমতা চালানো হয়েছে, তার বিচার এই দেশের মাটিতেই হতে হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরেকটা লড়াইয়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একটা লড়াই করেছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইনশাআল্লাহ। আমরা দুর্নীতি করব না। জামায়াত থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে কোনো এমপি-মন্ত্রী সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না, ট্যাক্সবিহীন গাড়ি চড়বে না, নিজের হাতে টাকা চালাচালি করবে না। কোনো এমপি-মন্ত্রী যদি নির্দিষ্ট কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে তার প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য থাকবেন।
এর আগে বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, আজকের সমাবেশের আয়োজন করতে গিয়ে, এখানে আসতে গিয়ে, এখানে এসে আমাদের তিন ভাই ইন্তেকাল করেছেন। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আল্লাহ তাদের জান্নাত দিন। পরিবারকে ধৈর্য ধরার তাওফিক দিন।
জামায়াত আমির বলেন, আগামীর বাংলাদেশে আরেকটা লড়াই হবে। একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়েও আমরা জয় লাভ করব।
সাত দফা দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুর দুইটায় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। তবে সমাবেশের কার্যক্রম সকাল থেকেই চলে। সারাদেশে থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী এই সমাবেশে যোগ দেন। জামায়াত নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন। জামায়াত আমিরের বক্তব্যের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয় জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ।