আইনশৃঙ্খলায় সমস্যা দেখছেন না সিইসি, আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ
রমজানের আগে নির্বাচন করার জন্য আমাদেরকে একটা চিঠি দেবেন

তাজা খবর: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে বিভিন্ন কারসাজিকে বড় হুমকি ও আস্থা ফেরানো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের পরদিন বুধবার (০৬ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরের নির্বাচনের প্রস্তুতির আদ্যোপান্ত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এক বছরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “এখন তো সেই অবস্থা নাই। অনেক ইমপ্রুভ করে গেছে। ভোট অনুষ্ঠানের সময় তো আরো কয়েকমাস আছে। এর মধ্যে দেখবেন যে ইনশল্লাহ এভিথিং ইন প্লেস এবং আমার বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা কোন সমস্যা সৃষ্টি করবে না।”
যে কোনো পরিস্থিতি নিজে ভালো থাকার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, “আমি সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ। যখন যে অবস্থায় থাকি আলহামদুলিল্লাহ, এটা আমার পৈত্রিক শিক্ষা। এটা যে অবস্থায় থাকি না, যত কঠিন সময় যাক না কেন । আমি ভালো আছি সেটাই বলবো আল্লাহর রহমতে।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গতকালকে তো একটা ঘোষণা দিয়েছেন। উনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে রমজানের আগে নির্বাচন করার জন্য আমাদেরকে একটা চিঠি দেবেন। আমি প্রত্যাশা করছি দ্রুত চিঠিটা পেয়ে যাব। কারণ উনার কথার মধ্যে আমরা তো বুঝতে পারি যে খুব দ্রুতই চিঠিটা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।”
সিইসি বলেন, “চিঠি না পেলেও আমাদের তো এটা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনা ছিল। আমাদের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছি ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি হবে না।” দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের জন্য এক মাস সময় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর আলোচনা শেষ হলে নির্বাচন কমিশনও অংশীজনের সংলাপে বসবে। এজন্য প্রায় এক মাস সময় পরিকল্পনা করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন সিইসি।
রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি সামনে আনলে সিইসি বলেন, এখন ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সারাদিন ধরে দলের আলোচনা করছেন তাদেরকে সময় দিয়ে পাওয়া মুশকিল। যেহেতু অনেকগুলো রিফর্মস কমিশন হয়েছে বিশেষ করে ইলেক্ট্রোকাল রিফর্মস কমিশন হয়েছে ইলেক্ট্রোকাল রিফর্মস কমিশন অনেক স্টেক হোল্ডারের সাথে আলাপ করেছে। এক ধরনের ইসির কাজ এক ধরনের তারা সেরে রেখেছে। তিনি বলেন, তারপরেও আমাদের তরফ থেকে আমরা একটা অপেক্ষায় ছিলাম, দলগুলো একটু ফ্রি হোক। ফ্রি হলে তখন আলোচনাটা স্টেক হোল্ডারদের সাথে করবো। আলোচনা করার জন্য এক মাসের একটা প্ল্যান করেছি।”
আয়নার মতো স্বচ্ছ ভোট
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আয়নার মতো স্বচ্ছ করতে চান সিইসি। এজন্য সচেনতনতা বাড়াতে দলগুলো ও অংশীজনের মধ্যে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেছেন।
সিইসি বলেন, “একটা ইলেকশনের স্বচ্ছতার জন্য যা যা দরকার, তার মধ্যে রুল অব মিডিয়া ইজ নাম্বার ওয়ান। আমরা কিন্তু ইলেকশনটাকে এজ ট্রান্সপারেন্ট এজ পসিবল করতে চাই; আয়নার মত পরিষ্কার করতে চাই। মানুষ, বিশ্ববাসী দেখুক যে আমাদের আন্তরিকতার আমাদের চেষ্টার কোন ঘাটতি আছে কি না। এটা দেখুক আমরা সেটা চাই। লুকিয়ে কোনো কাজ করতে চাই না।”
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “একদম আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা দেশবাসীর কাছে দেখাইতে চাই যে আমরা কী কী কাজ করছি এবং সুন্দর ইলেকশনের জন্য আমরা কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছি। কীভাবে কন্ডাক্ট করছি আপনারা দেখতে পারবেন। আপনাদের মাধ্যমেই এই জাতি এটা দেশবাসীটা জানতে পারবে।”
সেপ্টেম্বরকে ঘিরে নিবন্ধন, কেনাকাটা শেষ করার পরিকল্পনা
এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, প্রস্তুতি নিয়ে বললে ভোটার লিস্টটা হয়ে যাচ্ছে। প্রকিউরমেন্ট টার্গেট ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ করে ফেলতে পারবে। টেন্ডার হয়ে গেছে। তারপরে ডিলিমিটেশন (সীমানা নির্ধারণ) স্বচ্ছভাবে হয়েছে। শুনানি করে শেষ করা হবে।
“একটা বড় কাজ হয়ে গেছে পার্টি রেজিস্ট্রেশন। ইতোমধ্যে যাচাই বাছাই চলছে। যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে তাদের বিষয়ে তদন্ত হবে। এরপর কারো আপত্তি আছে কি না ১৫ দিনের বিজ্ঞপ্তি হবে।… এসব বড় কাজ বাই সেপ্টেম্বর; ইনশাআল্লাহ উই ওয়ান্ট টু কমপ্লিট অল দিস বিগ টাস্ক।“ তিনি বলেন, “আমরা এবার প্রায় ১০ লাখ লোকবলকে পোস্টাল ব্যালটের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবো। সাংবাদিকদের বিষয়টি জানা ছিল না; এটাও নোট রাখলাম।”
ডিসেম্বরের শেষার্ধে তফসিল
রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের ঘোষণা এলেও কবে তফসিল হবে সে বিষয়ে ডিসেম্বরের শেষার্ধের ইঙ্গিত দেন সিইসি। তিনি বলেন, ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। যেদিন পোলিং ডেট হবে, তার দুই মাস আগে তফসিল হবে।…আগে চিঠিটা পেয়ে নিই। বললাম তো যেদিন আমরা পোলিং ডেট ঠিক করবো।”
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “আগে চিঠিটা (প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে ভোট নিয়ে) পাই। আমরা আলোচনা করে; আমরা চিন্তা করব যে অমুক দিন ভোট হবে তার থেকে মাস দুই আগে আমরা শিডিউলটা ঘোষণা করব।”
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে দলগুলোর সহযোগিতা
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “সুতরাং যেন তেন একটা নির্বাচন করে আপনারা জিতার চেষ্টা করবেন না। আল্লাহর দোহাই, আমাকে সাহায্য করুন। আমি একটা সুন্দর ক্রেডিবল একটা ট্রান্সপারেন্ট ইলেকশন দিতে চাই; আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া পারব না।”
সিইসি বলেন, “প্লেয়াররা যদি সবাই ফাউল করার নিয়তে মাঠে নামে যে আমরা ফাউলই করব; এখন রেফারির পক্ষে সে ম্যাচ পণ্ড হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। লালকার্ড কজনকে দেখাবেন আপনি? সুতরাং যারা খেলবেন তাদের তো দায়িত্ব আছে বিশাল। আমি এই মেসেজটা রাজনৈতিক দলগুলোকে দিতে চাই।”
দলগুলোকে অন্যতম অংশীদার উল্লেখ করে সিইসি বলেন, “তারা একটা মেজর স্টেকহোল্ডার। আমাদের দায়িত্ব হবে খেলার মাঠটা তাদের জন্য সমান করে দেওয়া। তারা সুন্দর একই অপরচুনিটি পায় সেই চেষ্টাটা আমরা করছি এবং করব। ”
“আমি যে লেভেল প্লেং ফিল্ড তৈয়ার করার কথা বলছি। এটার বাস্তবায়ন আপনাদের উপর নির্ভর করছে আমি যে আপনারা যদি এই কাজে যদি আমাকে সহযোগিতা না করেন আমি তো এটা কাজটা করতে পারবো না।” ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার কথাও জানান সিইসি। তিনি বলেন, “আমাদের মূল মেসেজটা হচ্ছে- আমরা এবার এই ইলেকশনটাকে পার্টিসিপেটরি করতে চাই। ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ আমরা চাই।”
ভোটারদের আস্থা অর্জন বড় চ্যালেঞ্জ
ভোটারদের আস্থা অর্জনকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন ভালো রয়েছে বলে দাবি করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নাম্বার ওয়ান চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। আসলে মানুষের তো দোষ দিয়ে, ভোটারদেরকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা হারিয়েছে; নির্বাচন ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়েছে।”
৫ অগাস্ট পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে বলে দাবি করেন সিইসি। তিনি বলেন, “এখন তো সেই অবস্থা নাই। অনেক ইমপ্রুভ করে গেছে। ভোট তো আরো কয়েকমাস আছে। এর মধ্যে দেখবেন যে ইনশল্লাহ এভরিথিং ইন প্লেস এবং আমার বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এছাড়া এআই-এর অপব্যবহার রোধে ইসি কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা যখন প্রফেশনালি নিউট্রালি কাজ করছি, তখন অটোমেটিক্যালি আস্থা আসবে, ফিরে আসবে। আমরা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। রাজনৈতিক নেতারা অনেক কথা বলতে পারেন, উনাদের ইচ্ছা, বললে কোনো অসুবিধা নাই।”