সারা বাংলা

ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ও পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও পুলিশ প্রতিনিধিদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক

তাজা খবর: ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসের আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভাটারা থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শনিবার (২১ জুন) রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও পুলিশ প্রতিনিধিদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এ কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরোধ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর রাজধানীর নতুনবাজার এলাকার সড়ক ছাড়েন ইউআইইউর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রাত ৮টার মধ্যে তাঁদের দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দেওয়ার পর শিক্ষার্থী, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বৈঠকে বসে। বৈঠক শেষে জানানো হয়, বৈঠকে বহিস্কৃত সব শিক্ষার্থীদের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ভাটারা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আজ রাতে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ বসে সমাধান করা হয়েছে। সবাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ রাখতে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক আবু সাদাত মো. মোস্তাসির বিল্লাহ বলেন, শিক্ষাথীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সব শিক্ষাথীর স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীরা দাবিগুলো হলো—অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণ প্রদান। বহিষ্কারের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। ইউআইইউতে চলমান অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সংস্কার বাস্তবায়ন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল।

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জাকারিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু দাবি রয়েছে, সেগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ২৬ এপ্রিল সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ইউআইইউ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ নুরুল হুদার পদত্যাগ, মিডটার্মের সময় আবার পৌনে দুই ঘণ্টা করা এবং ক্রেডিট প্রতি ইমপ্রুভমেন্ট ফি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। পরে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন উপাচার্য আবুল কাসেম মিয়া ও ১১ বিভাগীয় প্রধান পদত্যাগ করেন। পরে আরও কয়েকজন শিক্ষক, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক পদত্যাগ করেন। এরপর গত ২৮ এপ্রিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যদিও ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে সরাসরি ক্লাস ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি করে আসছেন।

এর মধ্যে ২ জুন ৪১ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যার মধ্যে ২৪ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। পরে ১৯ জুন পাঁচজন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং বাকি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অভিভাবকসহ শুনানির প্রক্রিয়া চলমান ছিল। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল সব শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের। এ জন্য তাঁরা শনিবার আন্দোলন শুরু করেন।

আজ সকাল ৯টা থেকে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দেন। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর রাজধানীর নতুন বাজার সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে বিকেলে আন্দোলনকারীদের সরাতে লাঠিপেটা করে পুলিশ। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ডিএমপি। ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার তালেবুর রহমান শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button