সারা বাংলা

জাতীয় ফল মেলা: শতাধিক প্রজাতির ফল প্রদর্শনী

ফলের রূপে চোখ জুড়ায়, জিভে কেন নয়?

তাজা খবর: ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে পা রাখতেই মনে হলো, গ্রীষ্মের ক্যানভাসে রঙিন তুলির ছোঁয়া লাগিয়েছে কেউ। লাল, হলুদ, সবুজ, বেগুনি— কত রঙের কত ফল! যেন দেশজ জীবনের এক চিরায়ত রূপকথা জেগে উঠেছে ফলের আবরণে। পাখিরা ডাকছে গাছে, ফলের ঘ্রাণে মৌ মৌ পুরো প্রাঙ্গণ, শিশুদের উল্লাস আর ফলপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। সঙ্গে দেশীয় গানের আসর। তবু কোথায় যেন এক অপূর্ণতা।

ফলের রূপে চোখ জুড়ায়, জিভে কেন নয়?

২০২৫ সালের জাতীয় ফল উৎসব— তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে যেন ফলের চারণভূমি হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ফল যেন এখানে শুধুই ফল নয়; এ যেন কৃষির কবিতা, বিজ্ঞান ও প্রকৃতির এক মধুর আলিঙ্গন।

প্রবেশ করতেই দেখা মেলে শত প্রজাতির ফলের দৃষ্টিনন্দন এক প্রদশর্নী। যে প্রদর্শনী দেখে শুধু চোখ জুড়াবে তাই নয়, জিভেও আসবে জল। চোখের চাহিদা মেটাতে শতাধিক প্রজাতির ফল থাকলেও কিন্তু জিভের চাহিদা মেটাতে আছে শুধু আম। যা দর্শনার্থীদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। এর পাশাপাশি কিছু ফলের প্রক্রিয়াকরণ উপকরণ কিনতে পারছেন তারা। মেলার একটি বড় অংশই আমের হাটে পরিণত হয়েছে। তবে আক্ষেপ যে ফলগুলো সাধারণত কখনো দেখা হয়নি বা সচরাচর মেলে না, তার স্বাদ নিতে পারছেন না দর্শনার্থীরা।

মেলায় বিএডিসির স্টলে অর্ধশতাধিক প্রজাতির ফল দেশীয় ফল আছে। যে ফলগুলোর নাম অনেকে প্রথম শুনেছেন। ফলের সঙ্গে ছবি তুলছেন, দেখছেন, ঘ্রাণ নিচ্ছেন। কিন্তু মুখে তোলা বারণ।

স্বাদহীন উৎসব, রঙিন আক্ষেপ

মেলায় পা বাড়ালেই চোখে পড়ে ফলের পিরামিড। অর্ধশতাধিক প্রজাতির ফল একসাথে। এর চারপাশে ভিড় করে ছবি তুলছে শত শত মানুষ। আঙুর, স্ট্রবেরি, তরমুজ, পেঁপে, কামরাঙ্গা— এ যেন মাটির গন্ধে জন্ম নেওয়া এক স্বপ্নের ফলবাগান। তবু সেই স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখা গেলেও, জিভে তোলা গেল না।

মোহাম্মদপুর থেকে আসা আকবর আলী ও রুকাইয়া দম্পতি আক্ষেপ করে বলেন, মেলা মানেই তো স্বাদ আর উৎসবের মিশেল। এখানে দেখতে পাচ্ছি অনেক। ছুঁয়েও দেখা যাচ্ছে কিছু ফল। কিন্তু মুখে তো তুলতে পারা গেল না। ছোট্ট বাচ্চা দেখেই বায়না ধরেছে। কিন্তু এখানে তো বিক্রি নেই।

আরেক দম্পতি তার চার বছরের ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছেন। শফিকুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি বলেন, একটা বিব্রতকর অবস্থা। বাচ্চা তো দেখেই খাওয়ার জন্য উতলা। কিন্তু এখানে তো বিক্রি হয় না। পরে অনেক বুঝিয়ে আম কিনে দিয়েছি। আর কিছু ফাস্টফুড।

মেলাজুড়ে আমের রাজত্ব

ফলের রাজা আম। একাই রাজত্ব করছে পুরো মেলায়। মেলার প্রায় ৮০ শতাংশই আমের দখলে। আমের বেচাকেনাও ভালো জমে উঠেছে। রাজশাহীর তানোর উপজেলার উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম রাদিয়া অ্যাগ্রো ফার্মের আম নিয়ে স্টল দিয়েছেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার নিজের চাষ করা আম। দর্শনার্থীদের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। দর্শনার্থীরা দেখছেন, খাচ্ছেন, বাসায় কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে অর্ডারও দিয়ে যাচ্ছেন।

মেলা নাকি প্রদর্শনী, সীমারেখায় আটকে উৎসব

জাতীয় ফল মেলার মূল উদ্দেশ্য গবেষণা, কৃষকের জ্ঞান বিনিময়, আর সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। সেই কথা বলছেন আয়োজকেরাও। কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রতিবছর মেলাটা হয়ে থাকে ৮-১০ জুনের দিকে। কিন্তু এবার একটু দেরিতে করতে হয়েছে ঈদের ছুটির কারণে। এতে অনেক ফলের সরবরাহ কম। আর অপ্রচলিত ফলগুলো বেশি পাওয়া যায় না। আর যেহেতু আমের এখন ভরা মৌসুম। এ কারণে আমের আধিক্য রয়েছে। তবে আমরা আগামীতে চেষ্টা করব, অপ্রচলিত ফলগুলো দর্শনার্থীরা যেন কিনতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে।

১৯ জুন শুরু হওয়া এই ফল মেলা চলবে ২১ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। মেলায় সরকারি পর্যায়ে ২৬টি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৪৯টি মিলিয়ে সর্বমোট ৭৫টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন ধরনের দেশি ফল ও ফল চাষ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার পাশাপাশি রাসায়নিকমুক্ত ফল ক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৬৪টি জেলার ৪৩১টি উপজেলায় স্থানীয় পর্যায়েও ফল মেলা আয়োজন করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button