সারা বাংলা

দালাল ধরতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যৌথবাহিনীর অভিযান

বেশ কয়েকজন দালালকে আটক করা হয়েছে

তাজা খবর: রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালচক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী।

শনিবার (১ জুন) বেলা ১১টা থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে অভিযান শুরু করে তারা। এসময় বেশ কয়েকজন দালালকে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

অভিযানে অংশ নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা বলছেন, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে এবং সরকারি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে

জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই হাসপাতাল এলাকায় বাড়তে থাকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চলাচল। তারা গোপনে নজরদারি করে দালালদের অবস্থান নিশ্চিত করেন। এরপর বেলা ১১ টায় যৌথভাবে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ টিম।

অভিযানে হাসপাতালের বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ফার্মেসি ও গাড়ি পার্কিংয়ের আশপাশে সক্রিয় দালালদের চিহ্নিত করে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা হাসপাতালের প্রবেশপথ, রেজিস্ট্রেশন কাউন্টার কিংবা রোগীর স্বজনদের ভিড়ের মধ্য থেকে টার্গেট করে কথা বলেন এবং প্রলোভন দেখিয়ে রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে নিতে চাপ প্রয়োগ করেন।

অভিযান শেষে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘জনস্বার্থে আমরা এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করছি। অনেক রোগী এখানে এসে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, চিকিৎসা না পেয়ে দালালদের ফাঁদে পড়ে। আমরা চাই, সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানুষ নির্বিঘ্নে চিকিৎসা পাক।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা যৌথবাহিনীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বহুদিন ধরেই দালালদের দৌরাত্ম্যে সরকারি চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছিল। রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছিলেন, এমনকি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছিলেন।

হাসপাতালটির চিকিৎসক কামরুজ্জামান। তিনি জানান, ‘দালালরা শুধু রোগীদের নয়, আমাদের কাজের পরিবেশকেও নষ্ট করছে। রোগীরা রেজিস্ট্রেশন করে আবার চলে যাচ্ছেন। আমরা যখন ডাকি, তখন রোগীই নেই। আবার কেউ কেউ এসে বলে, বাইরে থেকে বলা হয়েছে এখানে চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। এসব পুরোই দালালদের কারসাজি।’

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক রোগীর ভাই বলেন, ‘এখানে এলেই একদল মানুষ ঘিরে ধরে, বলে ‘এখানে তো কোনো ডাক্তার নাই’, ‘ফাঁকা বেড নাই’। বাইরে একটা ভালো হাসপাতালের ঠিকানা দেয়। আমরা সাধারণ মানুষ, ভয় পেয়ে চলে যাই। আজকে অন্তত মনে হচ্ছে, কেউ জোর করে নিয়ে যেতে পারছে না।’

রোগীদের অভিভাবকরা বলছেন, এ ধরনের অভিযান নিয়মিত হলে সাধারণ মানুষ অন্তত চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে এসে নিরাপদ বোধ করবে। দালালদের জন্য বহু বছর ধরে সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোগীরা।

অভিযানের পর হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিয়মিত গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি দালাল প্রতিরোধে আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুপুর ১২ টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button