অপরাধ ও দুর্নীতি

সাভারে দিন-দুপুরে মহাসড়কে দু’টি চলন্ত বাসে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট

মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীদের মাঝে চরম আতঙ্ক

তাজা খবর:

ঢাকা জেলার সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ব্যাংক টাউন ও সিঅ্যান্ডবি এলাকায় আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) আধা-ঘন্টার ব্যবধানে দু’টি বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় বিভিন্ন মিডিয়ায় নিউজ হলে সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিঞা থানার একটি অনলাইন গ্রুপে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য লিখেন-এটা ডাকাতি না ছিনতাইয়ের ঘটনা। সেখানে তিনি জানান, ৫ জনের অধিক হলে ডাকাতি এবং ৫ জনের কম হলে ছিনতাই হয়। এ বিষয় দুর্বত্ত কবলিত বাসযাত্রী তায়েফুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, আমরা ছিনতাই বা ডাকাতি বুঝি না। মহাসড়কে দিনের বেলায়ও যাত্রীরা নিরাপদ না-এটাই বড় কথা। পরিবহণগুলোতে উঠে দিনের পর দিন দুর্বৃত্তরা যাত্রীদের মালামাল ছিনিয়ে নিচ্ছে-এটাই সত্য। এর অবসান হওয়া উচিত।

গত দুই মাসে মহাসড়কের সাভার ব্যাংক টাউন ও সিএন্ডবি এলাকায় এ নিয়ে প্রায় এক ডজন যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীরা মহাসড়কে পুলিশের টহল জোরদার করার আহবান জানিয়েছেন। এ ঘটনায় সাভার পরিবহনের ড্রাইভারকে আটক ও রাজধানীর দারুসসালাম থানা পুলিশ বাসটিকে জব্দ করেছে।

ছিনতাইকরীয়ের শিকার স্থানীয় সিনিয়র সাংবাদিক তায়েফুর রহমান জানান, তিনি দুপুর ১২টার সময় সাভার পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৩-০৭০৬) একটি বাসে করে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। বাসটি ব্যাংক টাউন বাসস্ট্যান্ডে থামানো হলে ৩-৪ জন যুবক গাড়িতে ওঠে। পরে গাড়িটি শত গজ সামনে ব্যাংকটাউন ব্রিজের উপর পৌঁছালে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়েসী ঐ যুবকরা মহিলা যাত্রীদের স্লুইস গিয়ার, চাকু ধরে জিম্মি করে তাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন, গলার চেইন, কানের দুলসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে নেমে যায়।

তিনি আরও বলেন, ছিনতাইকারীরা তার স্ত্রীর গলায় থাকা লক্ষাধিক টাকা মূল্যের লকেটসহ এক ভরি ওজনের সোনার চেইন নিয়ে গেছে। এ সময় অন্যান্য নারী যাত্রীদের কাছ থেকে একইভাবে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে বাসটির চালক এবং সহকারি ছিনতাইকারীদের সাথে জড়িত রয়েছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হলে ছিনতাইকারীদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে। গাড়িটিতে এ সময় ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রী ছিলো।

অপরদিকে বেলা সাড়ে ১১টার সময় সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় রাজধানী পরিবহনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের সর্বস্ত লুট করে নিয়ে যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ ব্যাচের এক ছাত্রী জানান, তিনি রেডিও কলোনী থেকে টিউশনি করে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে সিঅ্যান্ডবির একটু আগে রাজধানী পরিবহন বাসে হঠাৎ করে ৩ জন ছিনতাইকারী উঠে। তাদের ৩ জনের কাছেই চাকু ছিল। তাদের মধ্যে একজন ড্রাইভারকে চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে বাস থামায়। অপর ২ জন চাকু দেখিয়ে সব মহিলাযাত্রীদের স্বর্ণের চেইন, পুরুষ এক ব্যক্তির পকেটে থাকা ২০ হাজার টাকাসহ অস্ত্রের মুখে সর্বস্ত লুট করে নিয়ে গেছে। ঔ ছাত্রী এ সময় বলেন, আমরা কিভাবে যাতায়াত করবো। দিনের বেলায় এ ধরনের ঘটনা। পুলিশ প্রশাসন কি করে?

সাভারের টিআই বিষ্ঞুপদ শর্মা সাভার পরিবহনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় বাসের ড্রাইভারকে আটক করা হয়েছে। বাসটি রাজধানীর দারুসসালাম থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সিঅ্যান্ডবি’র ঘটনাটির সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

এর আগে ৫ এপ্রিল বিকেলে একই এলাকায় (ব্যাংক টাউন) ইতিহাস পরিবহনের একটি বাস থেকে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্য মালামাল লুটে নেয়। এ ছাড়া গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ব্যাংক টাউনের অদূরে পুলিশ টাউন এলাকার সেতুর কাছে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

এদিকে গত ২ মার্চ বেলা ২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত তিন মাসে চলন্ত বাসে অন্তত পাঁচটি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটল।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ও বাসের কয়েকজন চালক বলেন, এভাবে প্রায় দিনই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার অংশে চলন্ত বাসে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইকারী ও ডাকাতেরা যাত্রীবেশে বাসে উঠে দেশীয় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মাল লুটে নিচ্ছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অনেকে থানায় মামলা করছেন। অনেকে আবার ঝামেলা এড়ানোর জন্য থানা-পুলিশ থেকে বিরত থাকছেন।

তাঁরা জানান, যেসব ঘটনায় মামলা হচ্ছে, সেসব ঘটনাই কেবল প্রকাশ্যে আসছে। আর যেসব বাসে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে, এর প্রায় সবই গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ও ঢাকার মধ্যে চলাচল করে।

এ ব্যাপারে জানার জন্য সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুয়েল মিঞাকে একাধিকবার থানার সরকারি মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি।

তবে এ বিষয় সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিঞা ‘মিডিয়া-সাভার মডেল থানা’ নামের গ্রুপে একটি স্টাাটাস দিয়েছেন। তার বক্তব্য তুলে ধরা হলো-

‘প্রিয় সংবাদকর্মীবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম।
আজকের বাসের ছিনতাইয়ের বিষয়ে আমার কাছে বা পুলিশের সিনিয়র অফিসারগনের কাছে কোন ভুক্তভোগী কিছু জানান নাই। গত দুই মাসে তিনটা ছিনতাই এর ঘটনা ঘটেছে যার অধিকাংশ সনাক্ত এবং আসামি গ্রেফতার। উল্লেখ্য যে আগের সব ঘটনায় ২/৩ জন ছিনতাইকারী বাসে উঠে ৪/৫ মিনিটে যেটা ছিনতাই হয়েছে সেটা ডাকাতি বলে নিউজ করা হয়েছে। সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে ডাকাতি হতে হলে কমপক্ষে ৫ জন বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক অপরাধী হতে হবে। গত দিনের ঘটনার পর আমরা উলাইল/গেন্ডা/ব্যাংক টাউনে মোটামুটি সব লোকাল বাস চেক করা হচ্ছে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ সত্য সংবাদ তুলে ধরার জন্য।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button