সাভার চামড়া শিল্প নগরী নির্মাণে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা শুরু হয়েছে : শিল্প উপদেষ্টা
আমাদের চেষ্টা ছিল চামড়া সংগ্রহটা ভালোভাবে করা

মোঃ শরিফ হাসান নিলয়: রাজধানী ঢাকার সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর ত্রুটিপূর্ণ কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) প্রসঙ্গে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বিগত সময়ে যারা এসবের জন্য দায়ী ছিল, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। এছাড়াও এসবের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার (৯ জুন) দুপুরে ঢাকার সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান তিনি।
এসময় তিনি আরও বলেন, এবার আমাদের চেষ্টা ছিল চামড়া সংগ্রহটা ভালোভাবে করা এবং চামড়া বিক্রেতারা যেন সরকার নির্ধারিত মূল্য পান সেটিও নিশ্চিত করা। কিছু জায়গায় চামড়ায় লবণ দিতে দেরি ও সঠিকভাবে লবণ দিতে না পারায় চামড়া নষ্ট হয়েছে।
এছাড়াও আজ দুপুর পর্যন্ত বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে ৩.৭৮ লাখ পিস কোরবানির পশুর চামড়া প্রবেশ করেছে জানিয়ে শিল্প উপদেষ্টা জানান, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আরও ৭.৫ লাখ পিস চামড়া রয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে সাভারে বিসিক চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শনে এসে শিল্প নগরীর বিসিক কার্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ), বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইউএ), বিসিক, ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানি লিমিটেড (ডিটিআইইডব্লিউটিপিসিএল), ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ও বিভিন্ন ট্যানারির মালিকদের সঙ্গে সভা করেন উপদেষ্টা। সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে সিইটিপি’র বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, সিইটিপি’র ডিজাইন ত্রুটিপূর্ণ, যারা এটি করেছে তারা ত্রুটিপূর্ণভাবে করেছে। এখন নতুন করে প্ল্যান্ট তৈরির সময় হয়েছে। সরকারও চাইছেন এটি করতে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়ে একটি অ্যাসেসমেন্ট করছে। তারা সিইটিপির কোথায় কোথায় গলদ রয়েছে সেটি বের করছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, বিশেষ করে ইতালি, যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের দিয়ে একটি সিইটিপি করা যায় কিনা, সেটি নিয়ে ভাবছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
অন্যদিকে, এবছর কোরবানি কম হওয়ায় গত বছরের তুলনায় ১০ ভাগ চামড়া সরবরাহ কম হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, আমরা ট্যানারি মালিকেরা ইতোমধ্যে ৪ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করেছি। ঢাকার ভেতরে এবার ৮-১০ লাখ পিস পশু কোরবানি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের পূর্বের চিত্রে দেখা যায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস চামড়া কিনেছি। এর কারণ আমাদের সেই ক্রেতা ছিল। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদের বাধ্যবাধকতা চলে আসায় চামড়ার মূল্যের দরপতন শুরু হয়। ট্যানারিগুলো এলডব্লিউজি সনদ না পাওয়ার কারণে চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত দাম ও ক্রেতা পাচ্ছে না। চীনের নন-কমপ্লায়েন্ট বায়াররা এ সুযোগ নিয়ে ৫০ থেকে ৬০ সেন্টে চামড়া আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই চামড়া ৬-৭ বছর আগে আমরা গড়ে দেড় ডলারে বিক্রি করতাম। সিইটিপি যদি এলডব্লিউজি’র স্ট্যান্ডার্ডে হয় অথবা অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদিত হয় তাহলে চামড়ার দাম দ্বিগুণ করা সম্ভব।