সম্পাদকীয়

দুর্নীতিবিরোধী চেতনা জাগ্রত হোক

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও জিরো টলারেন্স

তাজা খবর:

দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। ঘুষ-দুর্নীতির এ অপচর্চা নতুন নয়। এর শুরু স্বাধীনতার পর থেকেই। অতীতে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। যখন যে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে, তারাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলেছে। কিন্তু সেসবই যে ছিল ফাঁকা বুলি ও অন্তঃসারশূন্য, তা বুঝতে কারওরই আইনস্টাইন হওয়ার দরকার পড়ে না। তবে আওয়ামী সরকারের গত দেড় দশকে ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থসংক্রান্ত যাবতীয় কেলেঙ্কারি যে অতীতের যে কোনো সময়ের কেলেঙ্কারিকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় হার মানিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের চিত্র দেখলেই দুর্নীতির মচ্ছব স্পষ্ট হয়। এই যখন পরিস্থিতি তখন এবারের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হাজির হয়েছে দেশের সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতায়। দীর্ঘ দেড় দশকের আওয়ামী অপশাসনের অবসান ঘটেছে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এ অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দেশকে নতুন করে গঠন করার যে স্বপ্ন জেগেছে—তা হচ্ছে ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যবিরোধী সাম্যের বাংলাদেশ। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) পালিত হয় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস; যার প্রতিপাদ্য ‘নতুন বাংলাদেশ-দুর্জয় তারুণ্য দুর্নীতি রুখবেই’। দিনটি উপলক্ষে আগের দিনই অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অনিয়মে নখদর্পহীন হয়ে থাকা দুদককে বাস্তবিকই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে উচ্চারিত হয় বিরাজমান ব্যবস্থায় যেন দুর্নীতিবিরোধী চেতনার উন্মেষ ঘটে।

সোমবার কালবেলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০২৩ সালে দুর্নীতির শিকার হয় দেশের প্রায় ৭১ শতাংশ পরিবার। আর ঘুষের শিকার হয় প্রায় ৫১ শতাংশ। ২০২৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে গত ১৫ বছরে ‘চামচা পুঁজিবাদ থেকেই চোরতন্ত্র’ তৈরি হয়। এতে অংশ নেন রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই। বলা হয়, এ সময়ে দেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রয়েছে স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী আইন। তা সত্ত্বেও নানা সময় সরকারের লেজুড়বৃত্তি, আজ্ঞাবহ ও সহযোগী হিসেবে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। ফলে দুর্নীতি সূচকে নেই তেমন উন্নতি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, যতদিন রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন না আসবে এবং তাদের নেতৃত্ব দুর্নীতিবিরোধী চেতনা ধারণ না করবে, ততদিন এ উদ্যোগ কার্যকর হবে না। এজন্য পুরো সমাজব্যবস্থায় দুর্নীতিবিরোধী চেতনা আবশ্যক।

অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সোচ্চার। এরই মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে তারা। দুদককে শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সংস্কার কমিশন গঠনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, অতীতের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, সত্যিকারই এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করবে। জাগ্রত হবে সর্বস্তরে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা। এ কথা সত্য, রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে গুণগত ইতিবাচক পরিবর্তন না হলে; শুধু দুর্নীতি নয়, সমাজের কোনো স্তরেই সুশাসন আনয়ন সম্ভব নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button