সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্যসেবা হোক জনবান্ধব

জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়া

তাজা খবর:

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সংস্কার প্রস্তাব প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা হলেও এরই মধ্যে চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনাসহ কমিশনটির বেশ কিছু প্রস্তাব সামনে এসেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য খাতকে প্রকৃতই জনমুখী, সহজলভ্য ও সর্বজনীন করতে সেবাপ্রত্যাশী প্রান্তিক জনগণসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সরাসরি মাঠপর্যায়ে আলাপ-আলোচনা না করে এটি করা হলে প্রস্তাবনা অসম্পূর্ণ থাকতে পারে বা সর্বজনীন নাও হতে পারে বলে কোনো কোনো অংশীজন যে প্রশ্ন তুলছেন—সেটাও তাৎপর্যপূর্ণ।

আমরা জানি, এর আগে দেশের স্বাস্থ্য খাত জনমুখী, সহজলভ্য ও সর্বজনীন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করা হয় গত বছর ১৮ নভেম্বর। কমিশনের প্রস্তাবনায় চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা, চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন, জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। যদিও নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে পারবে কি না, এ নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। রোববার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দেশের স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা চিকিৎসা ব্যয়ের ৭০ শতাংশই জনগণের পকেট থেকে যায়, তা সমাধানের পথ বাতলে দেওয়ার প্রস্তাব তারা করবে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অর্থাৎ আমলা ও চিকিৎসকদের মধ্যকার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব নিরসনে হেলথ সার্ভিস অথরিটি গঠন এবং অ্যালোকেশন অব বিজনেস পুনর্গঠন করা; প্রাথমিক নগর স্বাস্থ্য স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকায় সেগুলো ঠিকমতো যেন কাজ করে, এজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অংশ রহিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা। পাশাপাশি দেশে এখন পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য যথাযথ গুরুত্ব না পাওয়ায় যে নানা জটিলতা দৃশ্যমান; এসব জটিলতা নিরসনে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক একটি অধিদপ্তর ও একজন মহাপরিচালক নিয়োগের সুপারিশও করা হবে। রয়েছে চিকিৎসা শিক্ষা উন্নয়নে নতুন করে আর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন না করা। পাশাপাশি দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবল করে তোলার চেষ্টাসহ যেগুলো একেবারেই দুর্বল, তা বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশও করা হতে পারে। কমিশনের সদস্যরা বলেন, সুপারিশ খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। আরও অনেক কিছু সংযোজন-বিয়োজন হবে।

সামগ্রিকভাবে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাজুক অবস্থার কথা সবারই জানা। ন্যূনতম অর্থেও যদি ধরা যায়, তাহলে দেখা যাবে—জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে আমরা কতটা পিছিয়ে। ধরা যাক চিকিৎসা ব্যয়ের কথা। দেশের স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা এটি। এ ব্যয়ের ৭০ শতাংশই সেবাপ্রত্যাশীরা করেন নিজের পকেট থেকে। পাশাপাশি দেশের মোট স্বাস্থ্যসেবার ৬০ শতাংশের বেশি নিশ্চিত হয় ওষুধের দোকান ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তার মানে চিকিৎসা ক্রয় ছাড়া মানুষের বিকল্প পথ খুবই সংকীর্ণ। এই একটা তথ্য বা দিকই বলে দেয় যে, আমাদের মতো দেশ, যেখানে অধিকাংশ মানুষের আর্থিক সংগতি নাজুক, তাদের পক্ষে কতটা সম্ভব এ ব্যয়ভার বহন করা। এ ছাড়া রয়েছে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, জবাবদিহির অভাবসহ অব্যবস্থাপনাজনিত নানামুখী জটিলতা এবং সেবাপ্রত্যাশীদের সীমাহীন ভোগান্তির দিক। তাই এদিকটি সংস্কার প্রস্তাবে রয়েছে—এটা স্বস্তির। তবে তা বিশেষভাবে বিবেচনায় থাকা জরুরি বলে আমরা মনে করি। নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলোর অন্যতম চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের দায়িত্ব মূলত রাষ্ট্রের। পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী সময় পরও দেশে জনবান্ধব একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশন অত্যাবশ্যকীয় ও সুদূরপ্রসারী কিছু প্রস্তাবনা করবে, যা দেশে একটি জনবান্ধব স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভূমিকা পালন করবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button